
পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ দেশ-বিদেশ জুড়ে বাংলার শাড়ি প্রথম থেকেই প্রসিদ্ধ। আর এই নাম যাতে আরো ছড়িয়ে যায়, তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিতে চলেছেন নতুন পদক্ষেপ। গত বৃহস্পতিবার নদীয়া জেলায় একটি প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার শাড়ি’ নামক একটি নতুন ব্র্যান্ড তৈরীর পরিকল্পনা করা হবে। এই ব্র্যান্ডে মূলত থাকবে পশ্চিমবঙ্গের তৈরি বিভিন্ন শাড়ি। বাংলার হস্ত এবং তাঁত শিল্পের অগ্রগতি ঘটানোর উদ্দেশ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ।
ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ছোট, মাঝারি, হস্ত ও কুটিরশিল্প দপ্তরের আধিকারিকদের আলোচনায় বসতে বলেন। তার বক্তব্য, কেবলমাত্র এই দেশেই নয়, বাংলার শাড়ি যাতে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এর আগে তন্তুজ এবং মঞ্জুষা নামক দুটি সরকারি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। এই দুটি সংস্থা রাজ্যের কুটিরশিল্পের নমুনা প্রদর্শনে সক্ষম। কিন্তু ‘বাংলার শাড়ি’ নামক নতুন সংস্থাটি হবে স্বতন্ত্র। তন্তুজ এবং মঞ্জুষার সাথে নতুন সংস্থাটির কোন সংযোগ থাকবে না।
বাংলা কেবলমাত্র তাঁতই নয়, বিভিন্ন প্রকারের শাড়ি প্রস্তুতে বিখ্যাত। ধনিয়াখালি, মুর্শিদাবাদ সিল্ক, স্বর্ণচুরি, শান্তিপুরি, মসলিন, বালুচুরি, তসর সহ সুতির শাড়ি তৈরিতে সক্ষম বাংলার কারিগররা। বাংলার হস্ত এবং কুটির শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে। কাজেই মুখ্যমন্ত্রী বাংলার ক্ষুদ্রশিল্প গুলিকে ফের জীবিত করার জন্য এই নতুন সংস্থাটির প্রস্তাব দেন। বাংলার শাড়ি বিদেশে রপ্তানি করার ফলে মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, পূর্ব-বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া এবং মালদা সহ বিভিন্ন কুটিরশিল্পে সমৃদ্ধ স্থানগুলি পুনরুজ্জীবিত হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি রাজ্য এবং দেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ছোট এবং বড় মেলা অথবা প্রদর্শনীতে ‘বাংলার শাড়ি’-র স্টল দেওয়া হবে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি জেলায় থাকবে একটি করে শোরুম। কলকাতা এবং বড় শহরগুলি বাদেও ছোট ছোট গ্রাম এবং শহরগুলিতে এই সংস্থার শোরুম খুলে বাংলার সব ধরনের শাড়ি মজুদ রাখতে হবে।
শাড়ি এমনই একটি পরিধান যা অল্পবয়সী থেকে মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক মহিলাদের কাছে একটি অতীব প্রিয় বস্তু। বাংলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মহিলারা শাড়ি পরে থাকেন। ভারত ছাড়াও প্রবাসী ভারতীয়রাও বিভিন্ন পুজো অথবা দেশীয় অনুষ্ঠানে শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। দেখা গিয়েছে, বিদেশে দুর্গাপুজো এবং ঈদ ইত্যাদি ধরনের ধার্মিক অনুষ্ঠানে প্রবাসী ভারতীরা শাড়ি পরেন। এছাড়া প্রতিবেশী বাংলাদেশেও শাড়ির পরার প্রচলন রয়েছে। কাজেই বাংলার শাড়ি বিদেশে রপ্তানির ফলে পশ্চিমবঙ্গের কুটির এবং হস্তশিল্পের উন্নতি ঘটবে।
এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, আগামী বছরের প্রথম দিকেই এই নতুন ব্র্যান্ডটি চালু করে দিতে হবে। ‘বাংলার শাড়ি’ নামক নতুন প্রজেক্টের কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় তার জন্য কুটিরশিল্প দফতরের জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসতে বলেন। এই পদক্ষেপটি নেওয়ার ফলে শীতকালে অনুষ্ঠিত প্রচুর মেলায় তাঁতিরা নিজেদের দ্রব্য বিক্রয়ের মাধ্যমে অধিক মুনাফা লাভ করতে পারবেন বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।