পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ কোভিডের (covid) পর এবার নতুন আতঙ্ক রাজ্যে, যার নাম অ্যাডিনো ভাইরাস (Adeno Virus)। ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক জেলায় ছড়িয়ে পরেছে এই ভাইরাস। জানা গিয়েছে, এখনো পর্যন্ত বাংলায় একাধিক শিশু অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। শহর থেকে জেলা, হাসপাতালগুলিতে ভিড় বাড়ছে শিশুদের। এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার বাড়ছে ক্রমশ।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অ্যাডিনো ভাইরাসে (Adeno Virus) আক্রান্ত হয়ে না জেনেই অধিকাংশ শিশুরা তিনদিনের অধিক জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। কারও কারও সর্দি, চোখ জ্বালা, ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে মারাত্মক সংক্রমণ রয়েছে। অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে জ্বর না কমলে চিকিৎসককে দেখানো আবশ্যক। কিন্তু যতক্ষণে অভিভাবক ও চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করছেন ততক্ষনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছে রোগী।
‘সিভিয়ার নিউমোনিয়া’, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাসপাতালের তরফে শিশুদের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই বিষয়টাই উল্লেখ করা হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসের শেষদিক থেকেই রাজ্যে ছড়িয়ে পরতে শুরু করে এই অ্যাডিনো ভাইরাস (Adeno Virus)। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। মৃত শিশুদের বেশিরভাগেরই বয়স দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বলেও জানা যাচ্ছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ এবং বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রকোপ লক্ষ করা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত রবিবার বি সি রায় হাসপাতালে অ্যাডিনো ভাইরাসে (Adeno Virus) মৃত্যু হয়েছিল ভাঙড়ের ছ’মাসের শিশু মেহদি হাসানের। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল শিশুটি। মেহদির ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ফেলিওর’ এবং ‘সিভিয়ার নিউমোনিয়া’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও রাজ্যে অ্যাডিনো ভাইরাসে (Adeno Virus) আক্রান্ত হয়ে ১৩ বছরের এক নাবালিকার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, গত এক মাস ধরে পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি ছিল সে। গত বুধবার মৃত্যু হয় তার। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল খড়্গপুরের বাসিন্দা ঊর্জাসাথী রায়চৌধুরী নামের ওই নাবালিকাকে। তারপরের দিনই পরীক্ষায় তাঁর শরীরে অ্যাডিনোভাইরাসের নমুনা মেলে। এরপর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। এর মধ্যেই ঊর্জাসাথীর শরীরে দানা বাঁধে নিউমোনিয়া। শেষে তাকে ভেন্টিলেশনেও রাখা হয়। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। গত বুধবারই মৃত্যু হয় ওই নাবালিকার।
গত ডিসেম্বরের শেষ থেকে এই রবিবার পর্যন্ত রাজ্যে যত জন শিশু হাসাপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স দু’বছরের মধ্যে। এখনও পর্যন্ত কলকাতা মেডিক্যালে ৩, ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথে ৩ এবং বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চলতি মরসুমে রাজ্যজুড়ে হুহু করে বেড়েছে অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ। শুধুমাত্র গত ৩ মাসেই ১১ জন শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে বলে খবর। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-এ বাড়ছে রোগীর ভিড়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে নয়া নির্দেশিকাও প্রকাশ করেছে কলকাতা পুর প্রশাসন।