পশ্চিমবঙ্গ ডেস্কঃ ছোটবেলা থেকেই মায়ের আদর, যত্ন, স্নেহে বড় হয়ে উঠি আমরা। প্রতিটি মায়ের সঙ্গে তার সন্তানের একটি অন্যরকম টান থাকে। তবে বৃদ্ধাশ্রম এর যুগে এক অদ্ভুত কাজ করে দেখালো আধুনিক শ্রবণ কুমার ‘মিজানুর রহমান।’
মায়ের জীবন বাঁচাতে কার্যত ১৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে নজির গড়লেন এক যুবক। জানা গিয়েছে তিনি, সামশেরগঞ্জ থানার উত্তর চাচণ্ড গ্রামের বাসিন্দা। ওই যুবকের নাম মিজানুর রহমান। পেশায় তিনি ঘুগনি বিক্রেতা। মিজানুর সাইকেলে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুগনি বিক্রি করেন। ঘুগনি বিক্রি করে যে টাকা তিনি উপার্জন করেন সেই টাকা দিয়েই তিনি সংসার চালান।
জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই মিজানুর রহমানের মা শারিরক অসুস্থতায় ভুগছেন। যার ফলে তিনি বাড়িতেই মায়ের চিকিৎসা চালাচ্ছিলেন। মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তিনি ঈদের দিন কয়েক আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেন। এরপর তিনি মা কে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এমআরআই (MRI) করিয়ে আসেন । চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন রিপোর্ট অনুযায়ী মায়ের চিকিৎসা করা হবে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি পরদিন যখন হাসপাতালে রিপোর্ট আনতে পৌঁছায়। সে সময় কার্যত রিপোর্ট দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মিজানুর রিপোর্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। করোনা পরিস্থিতির জেরে গোটা রাজ্য জুড়ে লকডাউন এর ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। কার্যত তারপরের দিনই রাজ্যে লকডাউন শুরু হয়ে যায়।
যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় সম্পূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কিভাবে মায়ের রিপোর্টটা আনতে হাসপাতালে যাবেন তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন মিজানুর রহমান। দিন যত ঘুরে চলেছে মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। চিকিৎসকরা ও জানিয়ে দিয়েছে রিপোর্ট না পেলে মায়ের চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে না। এর পরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সাইকেলে করেই রিপোর্ট আনতে যাবেন হাসপাতলে।
সামশেরগঞ্জ থানার চাচণ্ড গ্রাম থেকে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছাতে গেলে প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে হবে তাকে। তবে তিনি কোন কিছুই পরোয়া না করে বুধবার সকালে সাইকেল নিয়ে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন মিজানুর। টানা সাড়ে চার ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে ৭০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম কর হাসপাতালে পৌঁছালেন তিনি। রিপোর্ট হাতে পেয়ে তিনি আবারও বাড়ির উদ্দেশ্যে সাইকেল করে ৭০ কিলোমিটার রাস্তা সাড়ে চার ঘন্টা ধরে চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট তিনি ১৪০ কিলোমিটার রাস্তা ৯ ঘণ্টা ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, মায়ের রিপোর্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তিনি। মিজানুর রহমানের এই মাতৃভক্তির কথা মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। ঘুগনি বিক্রেতার কথা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে নেট মাধ্যমে। তার মায়ের প্রতি এত ভালোবাসার কথা মানুষ জানতে পেরে প্রশংসাও করেছেন তাকে অনেকেই।
তবে তিনি জানিয়েছেন, সবই মায়ের আশীর্বাদ, মায়ের ভালোবাসা ও মায়ের আশীর্বাদ সঙ্গে না থাকলে আমি কিছুই করতে পারতাম না। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন মায়ের চিকিৎসা শুরু করতে ৯ ঘণ্টা ধরে ১৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করা এটা সামান্য একটা বিষয়। এমন নজরবন্দি একটি কাজ করে, কোন রকম অহংকার বোধ করছেন না মিজানুর। যার ফলে মানুষের মনে আরও বেশি জায়গা করে নিয়েছেন ঘুগনি বিক্রেতা মিজানুর রহমান।