বিশ্বকাপ ফুটবলঃ- পোল্যান্ডকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে রাউন্ড অফ সিক্সটিন পৌঁছে গেল আর্জেন্টিনা। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচে হেরেও দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। তবে মেসি কি পারবেন তার অপূর্ণ বিশ্বকাপের স্বপ্ন পূর্ণ করতে ?
এদিন আক্রমনাত্মক ও আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টাইন দল। অ্যাটাক, অ্যাটাক , অ্যাটাক এটাই ছিল তাদের মূল মন্ত্র। আর এই মন্ত্রেই পোল্যান্ডকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে শেষ ষোলোয় পৌঁছে গেল মেসি বাহিনী। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচ হারার পরে দলকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন মারাদোনা। মেসির ছেলেদের খেলায় তার ছোঁয়া আছে এমনটাই মনে করছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ভক্তরা। নকআউটে যোগ্যতা অর্জন করার পর এই দলকে সহজে আটকানো যাবে না বলেও দাবি অনেকের। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার প্রথম গোলটি করেন এ্যালেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টার, আর্জেন্টিনার হয়ে এটি ছিল তার প্রথম গোল এবং দ্বিতীয় গোলটি করেন জুলিয়ান আলভারেজ। দুই গোলের ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে শেষ করে লিওনেলর স্কালোনির ছেলেরা।
রাউন্ড অফ সিক্সটিনে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ হল অস্ট্রেলিয়া। একাধিক লড়াকু ফুটবলার থাকলেও মেসিরাই সোজাসুজি ফেভারিট বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং আর্জেন্টিনার পক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের রাস্তা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। তাছাড়া এই বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন লিওনেল মেসি। তিন ম্যাচ থেকে দুটি গোল করেছেন তিনি। পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোল না পেলেও অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল তার। মেসির দৌড়, নড়াচড়া, নিখুঁত পাসিং ফুটে উঠছিল প্রত্যেক মুহূর্তে।

খেলা শুরুর প্রথমার্ধ থেকে বেশ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছিল আর্জেন্টিনা দল। আক্রমণের উপর আক্রমণ করেছিল তারা। কিন্তু চিড় ধরাতে পারছিল না পোল্যান্ডের রক্ষণভাগে। ছোট ছোট পাস খেলে প্রতিপক্ষের বক্সে উঠে আসছিল তারা। দেখে মনে হচ্ছিল যেন সেই দিয়েগো মারাদনার স্বর্ণযুগের দল। ফিরে এসেছে আবার সেই শিল্প। উইং থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিল মেসি বাহিনী। প্রথম দুটি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে নিজের দখলে বল এত বেশি রাখতে দেখা যায়নি। পোল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সমস্যা কাটিয়ে নিয়েছে লা আলবিসেলেস্তেরা। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার বল পজিশন ছিল ৭০ শতাংশ।
গোটা প্রথমার্ধে ম্যাচের আধিপত্য ছিল মেসিদের। প্রথমার্ধে গোলের দেখা পেয়ে যেতেন লিওনেল মেসি। কিন্তু বিপক্ষ দলের গোলরক্ষক হিসাবে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়েছিলেন ওইচেখ শেজ়নি। একের পর এক শট প্রতিরোধ করে গোলের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছিলেন তিনি। ৩৫ মিনিটে একটি বল বাঁচাতে গিয়ে মেসির মুখে হাত মেরে দেন তিনি। ভার প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে সেটিকে পেনাল্টি দেয় ম্যাচ রেফারি। কিন্তু রেফারি সিদ্ধান্তটা কতটা যুক্তিসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। ৩০ গজের মধ্যে গোলরক্ষক যেখানে খুশি যেতে পারেন বলটি বাঁচাতে গিয়ে হাত লাগে মেসির মুখে। তবুও পেনাল্টির নির্দেশ কিছুটা অবাক করেছে অনেককে।
তবে তাতে মেজাজ হারাননি পোলিশ গোলকিপার শেজ়নি। ৩৮ মিনিটে মেসির পেনাল্টি বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে সেভ করে দেন তিনি। এই নিয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার পেনাল্টি বাঁচালেন জুভেন্তাসের এই তারকা গোলকিপার। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আল দৌসারির পেনাল্টি শট রুখে দেন তিনি। মেসির পেনাল্টির সুযোগ নষ্ট হওয়ার পরও হাল ছাড়তে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। ৪৫ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে জুলিয়ান আলভারেজের জোরালো একটি শট আবারো সেভ করেন শেজ়নি।
বিরতির পর খেলা শুরু হতে না হতেই দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম গোলটি করলেন এ্যালেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টার। এটি তার আন্তর্জাতিক জীবনের প্রথম গোল। তারপর ধীরে ধীরে আক্রমণে উঠতে শুরু করল আর্জেন্টিনা। আক্রমণের উপর আক্রমণ তুলে আনছিল তারা । কিছুক্ষণ পরেই আর্জেন্টিনার হয়ে ইন্সুরেন্স গোলটি তুলে নেন তরুণ জুলিয়ান আলভারেজ। মাঝ মাঠ থেকে এনজো ফার্নান্ডেজের বাড়ানো বল ডান পায়ে নিখুঁতভাবে জালে জড়ান তিনি। তবে ১০ মিনিট বাকি থাকতে খেলায় কিছুটা হলেও ধীরগতি আনে আর্জেন্টিনা। বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলছিল তারা। অবশ্য গোটা ম্যাচে পোল্যান্ডকে কখনো দেখেই মনে হয়নি তারা গোল করার জন্য মাঠে খেলতে নেমেছেন। নিজেদের দাপট রেখেই ম্যাচটি জিতে নেন মেসিরা।