লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনা, Lionel Messi, Argentina, Fifa World Cup, Qatar World Cup
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে পরাজিত করে শেষ চারে পৌঁছে গেল আর্জেন্টিনা | ছবি - সংগৃহীত

বিশ্বকাপ ফুটবলঃ- গতকাল রাতে কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে স্থান নিশ্চিত করে নিল আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচে ১২০ মিনিট খেলা চলার পরও ফলাফল না হওয়ায় ট্রাইবেকারে জিতে সেমিফাইনালে গেলেন মেসিরা। প্রথমদিকে আর্জেন্টিনা দুই গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় মনে হচ্ছিল ইতিমধ্যে সেমি ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে তারা। কিন্তু ৯০ মিনিট খেলার শেষ দিকে সেই দু গোলে ব্যবধান শোধ করে দেয় নেদারল্যান্ডস। তারপরে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। শেষ পর্যন্ত ট্রাইবেকারে আসে খেলার ফলাফল। ৪ -৩ গোলের ব্যবধানে নেদারল্যান্ডকে পরাস্ত করে আর্জেন্টিনা।

এই দিন মেসিকে আটকানোর অনেক চেষ্টাই করেছিল লুই ফান হালের ছেলেরা। ম্যাচের শুরু থেকেই জোনাল মার্কিং এ রাখা হয় তাকে। মেসির পায়ে বল গেলেই তাকে ঘিরে ধরছিল তিন-চারজন ডাচ ফুটবলারেরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনায় সফল হননি ফান হাল। জোনাল মার্কিং ভেঙে গোল করালেন মেসি। তারপর আবার পেনাল্টি থেকে গোল তুলে নিলেন।

ম্যাচ অ্যানালিসিস

ম্যাচের শুরুর প্রথমার্ধ থেকেই রক্ষণভাগ মজবুত করে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছিল দুই দল। ছোট ছোট পাসে নিজেদের মধ্যে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করছিল উভয় দলই। মাঠে দুই প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠে আসার চেষ্টা করছিল নেদারল্যান্ড দল। ২০ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার বক্সের ভেতরে বল পেয়ে গিয়েছিলেন মেম্ফিস দীপাই। তবে খুব একটা বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে। অন্যদিকে প্রতি আক্রমণে উঠে আসার চেষ্টা করেছিল আর্জেন্টিনা দল। কিন্তু সেই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি তারা।

দুই দলের খেলার পরিকল্পনা ছিল নিজেদের রক্ষণভাগ থেকে। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে আক্রমণ সৃষ্টি করা চেষ্টা করছিল খেলোয়াড়েরা। দু’দলের রক্ষণভাগ মজবুত হওয়ায়। কোন দলই গোলের মুখ খুলতে পারছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩৪ মিনিটের মাথায় মেসির পায়ের জাদুতে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা । বক্সের সামনে চারজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে কাটিয়ে মোলিনার উদ্দেশ্যে বক্সে চমৎকার বল বাড়ান তিনি। আগুয়ান গোলকিপারকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দেন মোলিনা।

আরো একবার বক্সের সামনে বল পেয়েছিলেন মেসি কিন্তু ডান পায়ের দুর্বল শট সোজা মারলেন গোলরক্ষকের হাতে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ফ্রি কিক পেয়ে যায় নেদারল্যান্ড। তবে সেই ফ্রি কিক থেকে গোল এর মুখ খুলতে পারেনি নেদারল্যান্ড। ম্যাচের দ্বিতীয় অর্ধের শুরুর দিক থেকেই বেশ আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে ফুটবল খেলতে নামে নেদারল্যান্ডস । দুই প্রান্ত থেকেই আক্রমণে উঠে আসতে শুরু করে ভ্যান ডাইকের দল । তবে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ কে। বেশ কয়েক মিনিট পরে খেলায় ফেরে আর্জেন্টিনা । ৭১ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে ফাউল আদায় করেন মার্কোস আকুনা। পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। তবে এবার কোনো রকম ভুল করেননি মেসি। পেনাল্টি থেকে গোল তুলে ২-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে দেন আর্জেন্টিনাকে।

গোল শোধ করার জন্য মরিয়া আক্রমণ চালাতে শুরু করে ডাচ খেলোয়াড়রা। ৮৩ মিনিটে প্রথম গোলটি শোধ করেন উইঘর্স্ট। ডান প্রান্ত থেকে ভেসে আসা ক্রস হেড এর সাহায্যে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। তারপর শুরু হয় খেলার নাটক। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল দুই পক্ষের খেলোয়াড়েরা। ফলে বেশকিছু সময় নষ্ট হওয়ায় ১০ মিনিটের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। ম্যাচের শেষ মিনিটে বক্সের সামনে ফ্রী কিক পায় নেদারল্যান্ডস। ফ্রি কিক থেকে গোল করে নেদারল্যান্ডসকে ম্যাচে ফেরান সেই উইঘর্স্ট। ফলাফল ২-২ হওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময় খেলা গড়াতেই আক্রমণের ঝড় তোলে আর্জেন্টিনা। লাউতারো মার্টিনেজ এর একটি জোরালো শট প্রতিহত করেন নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক আন্দ্রিজ নোপার্ট। ম্যাচের শেষের দিকে ফের্নান্দেসের শট প্রতিহত হয় পোস্টে লেগে। প্রচুর সুযোগ পেয়েও গোলের মুখ খুলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

পেনাল্টি শুট আউটে দলের হিরো হয়ে দাঁড়ালেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ । নেদারল্যান্ডসের প্রথম দুটি শট বাঁচিয়ে দেন তিনি। আর্জেন্টিনার হয়ে চতুর্থ পেনাল্টিতে বাইরে মারেন ফার্নান্ডেজ। শেষ পেনাল্টিতে গোল করে সেমিফাইনালে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে নেয় মেসির আর্জেন্টিনা।