পশ্চিমবঙ্গ স্পোর্টস ডেস্কঃ- গত বছর ১৮ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপে নিজের ক্যারিয়ারের পূর্ণতা পেয়েছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ফুটবলার লিওনেল মেসি। ৩৬ বছরের অপেক্ষার পর ফের তার নেতৃত্বে বিশ্বকাপের শিরোপা অর্জন করেছে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে পরাজিত করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। এছাড়া বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় হিসাবে গোল্ডেন বল জিতেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক । তবে বিশ্বকাপ জেতার পর কেমন অনুভূতি ছিল তার ? এবং কাতারে পা রাখার আগেই বিশ্বকাপ জেতার আত্মবিশ্বাস ছিল কতটুকু ? সবকিছুই জানতে চায় ফুটবল বিশ্ব এবং এবার মেসি তার উত্তরও দিলেন।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই প্রথমবার সাক্ষাৎকারে এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি। আর্জেন্টাইন রেডিও ‘উরবানা প্লেই এর সাংবাদিক ন্ডি কুজনেতসফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কি বলেছেন লিওনেল মেসি। আসুন জেনে নেওয়া যাক।
১) ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তাকে
আমি এটি আগেও বলেছি। সম্ভবত ২০১৪-র আগে। আমি বলেছিলাম যে সৃষ্টিকর্তা আমাকে উপহার দেবে বিশ্বকাপ। এরপরেই কোপা আমেরিকা জিতেছিলাম ব্রাজিলে। তারপরেই অনুভব করলাম বিশ্বকাপ জেতার মুহূর্ত। আমি জানতাম সৃষ্টিকর্তা আমাকে এটি উপহার দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। তা আমি কিভাবে জানতে পেরেছি, তা আমি বোঝাতে পারবো না। আমি জীবনে যা যা অর্জন করেছি, তার জন্য সব সময় ধন্যবাদ জানাই তাকে। এর থেকে বেশি কিছু চাইতে পারতাম না জীবনে যা কিছু পেয়েছি, সেই জন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ।
২) বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথম কি বললেন
সেদিনের পর থেকে সবকিছু যেন পাল্টে গিয়েছে। গোটা ক্যারিয়ারজুড়ে যা জেতার স্বপ্ন দেখে এসেছি, যার জন্য এত প্রার্থনা করেছি তা ফুটবলের শেষ জীবনে এসে সত্যি হয়েছে।

৩) ২০২২ বিশ্বকাপের সব থেকে কঠিন মুহূর্ত
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারটা ছিল সবথেকে কঠিন মুহূর্ত। আর মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল সবথেকে কঠিন। আমার মনে হয় সেই ম্যাচে আমরা সবথেকে জঘন্য খেলেছি। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম তবে এই দলটি না থাকলে ম্যাচটি যেটা খুবই কঠিন হয়ে যেত।
৪) বিশ্বকাপে কেমন ছিল সন্তানেরা
আমার এবং আমার পরিবারের জন্য ছিল একটি অবিশ্বাস্য মাস। পাগল হয়ে পড়েছিল থিয়াগো। সে কিভাবে উদযাপন করেছে এবং কতটা দুশ্চিন্তায় ছিল, তা দেখেছে সবাই। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সে। মাতেও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের ম্যাচের পর আমাদের পরের রাউন্ডে ওঠার সমীকরণ কষেছে। শিরো এখনো সেসব কম বোঝে। তবে বাকি দুজন ভক্তদের সঙ্গে এসব নিয়েই মেতেছিল। প্যারিসে ফিরে আসার পর কাতারে সেই সব কাটানো মুহূর্তের কথা খুবই মনে পড়ছে।

৫) দিয়েগো মারাদোনা
বিশ্বকাপ ট্রফিটি দিয়েগো মারাদোনার হাত থেকে পেলে আরো বেশি খুশি হতাম। কিন্তু তিনি অন্তত আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছেন। আমাদের জাতীয় দল নিয়ে তার প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে। বিশ্বকাপ ট্রফিটি তার হাত থেকে নিতে পারলে দারুন একটা ছবি হতো। মারাদোনা ছাড়াও আরো যারা আমাদের উপর থেকে ভালবাসে, তাদের ভালোবাসার জোর ছিল বলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব হয়েছে।
৬) বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বার্সেলোনার মেসিকে নিয়ে কি বললেন
আমি বলতে চাই, কিছু অসাধারণ জিনিস তার জন্য অপেক্ষা করছে। এমন যা কখনো সে কল্পনাই করতে পারেনি। তার চলার পথ অনেক সুন্দর হবে । অনেক কঠিন মুহূর্ত আসবে, যা তাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। স্বপ্ন দেখার হাল ছাড়লে হবে না। এবং একদম শেষে সে তার সেরা পুরস্কারটি পাবে। ভালোভাবে শেষ হবে সবকিছু। যেন একটা গোটা সিনেমার মতো।
৭) বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিতে সেই প্রথম চুম্বন
ট্রফিটি রাখা ছিল মঞ্চের উপর। যা করতে মন চাইছিল, তা পারছিলাম না। ট্রফিটি যেন বারবার আমাকে ডাকছিল, যে আসো এসে আমাকে নিয়ে যাও। যাওয়ার সময় ইচ্ছে হয়েছিল ট্রফিটিকে চুম্বন করার।

৮) ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে শেষ শট মন্তিয়েলের
সেই মুহূর্তে কি হচ্ছিল, সেটি বোঝানো খুবই মুশকিল। মাথায় ঘুরছিল অনেক কিছু । বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি, তা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তারপর ভাবছিলাম, ফুটবল জীবনের শেষের দিকে এসে জাতীয় দলের হয়ে সবকিছু অর্জন করতে পারলাম। কখনো কল্পনাই করতে পারিনি পারিনি সবকিছু এইভাবে হয়ে যাবে। ওই মুহূর্তটা আমার জন্য খুবই সুন্দর ।
৯) বিশ্বকাপ ফাইনালে নামার আগের রাত
গোটা বিশ্বকাপ জুড়ে যা করেছি, সেটাই। গল্প করছিলাম আন্তোনেল্লার সঙ্গে। একই কাজ করেছি, নতুন কিছু নয়। বেশ ভালো ঘুম হয়েছিল। আর গোটা বিশ্ব কাপ জুড়ে ছিলাম মেজাজে।
১০) নিজের দেশে ফিরে রোজারিওতে উৎসব পালন
বিশ্বকাপ জেতার পর নিজের বাড়ি ফিরে অনুভূতির মুহূর্তটা ছিল খুবই সুন্দর । মাত্র এক দু ঘন্টা পেরেছিলাম ঘুমাতে।