jagdeep dhankhar, mamata banrjee, west bengal, কোচবিহার, শীতলকুচি, ভোট পরবর্তী হিংসা
চিত্র- সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গ ডেস্কঃ একুশের বিধানসভা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে প্রায় দিন ১৫ হতে গেল। তবে ভোট পরবর্তী হিংসা এখনো বন্ধ হল না। রাজ্যে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে তৃতীয়বার বাংলার মসনদে বসলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত ৫ ই মে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করেন। তবে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ প্রশাসনকে কড়া হাতে বাংলায় শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে তার পরেও কোন প্রকার শান্তির বার্তা শোনা যায়নি। বরঞ্চ বিভিন্ন স্থান থেকে উঠে আসছিল অশান্তির খবর।

jagdeep dhankhar, mamata banrjee, west bengal, কোচবিহার, শীতলকুচি, ভোট পরবর্তী হিংসা
চিত্র- সংগৃহীত

ভোট পরবর্তী হিংসা খতিয়ে দেখতে এবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় খোদ বেরিয়ে পড়লেন রাজ্য সফরে। রাজ্য সফরে বেরিয়ে ভোট-পরবর্তী হিংসা কবলিত এলাকা গলি ঘুরে দেখছেন তিনি। ১০ ই এপ্রিল কোচবিহারের শীতলকুচি তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো সংবাদের শিরোনাম হয়ে দাঁড়িয়েছে শীতলকুচি। আজ বৃহস্পতিবার বিএসএফের কপ্টারে করে কোচবিহারের শীতলকুচি গেলেন জাগদীপ ধনকড়।

আরও পড়ুনঃ মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাধান্য না দিয়ে সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর ! কেন আমন্ত্রণ করা হলোনা মুখ্যমন্ত্রীকে?

এর আগেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস কবলিত এলাকা গুলিতে নিজে গিয়ে দেখে আসবেন। তার মধ্যে তিনি কোচবিহারের শীতলকুচিতে যেতে চান। রাজ্যপাল তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন এবং রাজ্যের কাছে হেলিকপ্টার চেয়ে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোন প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় সেনাবাহিনীর কাছে হেলিকপ্টারের সাহায্য নেন তিনি। তবে তার এই রাজ্য সফরকে ঘিরে রাজভবনে পৌঁছেছিল নবান্নের কড়া নোটিশ।

নোটিসে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় কে জানানো হয়েছিল, রাজ্য সফরে যেতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার অনুমতি নিতে হবে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী ওই চিঠিতে লিখেছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করে যেতে হবে, অনুমতি মিললে তিনি যেতে পারবেন রাজ্য সফরে। মুখ্যমন্ত্রীর এমন নোটিশ পেয়ে বিএসএফের হেলিকপ্টারে করে কোচবিহারে পৌঁছে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতার উপর ক্ষোভ উগরে দিলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন, “স্বাধীন ভারতে প্রত্যেকটি নাগরিকের যেকোনো স্থানে যাওয়ার অধিকার আছে।”

jagdeep dhankhar, mamata banrjee, west bengal, কোচবিহার, শীতলকুচি, ভোট পরবর্তী হিংসা
চিত্র- সংগৃহীত

এছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির পাল্টা জবাবে তিনি লিখেছেন, “আমি অবাক যে আপনার মত একজন নেত্রী কিভাবে ভাবলেন রাজ্যপালের সফরের জন্য রাজ্য সরকারের নির্দেশ প্রয়োজন। মানুষের কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার জন্য আমি সফর করতে চাইছি। তাই এখন নিয়ম মানার সময় নয়। আমি আপনার দাবি মানতে রাজি নই।”

আরও পড়ুনঃ শীতলকুচি নিয়ে ফের রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী বিবাদ চরমে, টুইট করলেন রাজ্যপাল

তিনি কোচবিহারে পৌঁছে কোচবিহারের সন্ত্রাস কবলিত এলাকা গুলি ঘুরে ঘুরে দেখেন। রাজ্যপাল যখন কোচবিহারের শীতলকুচিতে ভোট পরবর্তী হিংসা পরিদর্শনে যান, তখনই এক মহিলা মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকেন এবং পরিবারের স্বজনের হারানোর দুঃখে বুক ফাটা কান্নায় ও আর্তনাদে মাটিতে সুয়ে চিৎকার করতে থাকেন। তিনি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এর কাছে অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও রাজ্যপাল ওই মহিলার বাড়ি পরিদর্শন করেন। ভোট পরবর্তী হিংসায় ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে ওই মহিলার, সেই দৃশ্য দেখেন রাজ্যপাল।

jagdeep dhankhar, mamata banrjee, west bengal, কোচবিহার, শীতলকুচি, ভোট পরবর্তী হিংসা
চিত্র- সংগৃহীত

সবকিছুই পরিদর্শন করার পর রাজ্যপাল কিছু প্রশ্ন করে বলেন, “কিছু মানুষের এত সাহস হয় কি করে, আইন হাতে তুলে নেওয়ার।” এবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিশানায় নিয়ে বলেন, “ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পদক্ষেপ নিতে বলেছিলাম এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলেই জানিয়েছিলেন। তবে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ বা মুখ্যমন্ত্রী মমতার কোনো ভূমিকা”-য় চোখে পড়েনি বলে দাবী রাজ্যপালের।

আরও পড়ুনঃ মন্ত্রী পরিষদ : মমতার মন্ত্রীসভায় কার দায়িত্বে কোন দপ্তর ? এক নজরে দেখে নিন

এদিন তিনি কোচবিহারের মানব অধিকার কমিশন এবং সংবাদমাধ্যমকে নিশানায় নিয়ে বলেন, “কোথায় গেল মানবাধিকার সংগঠনগুলি ? কোথায় গেল সংবাদমাধ্যম ? এই ঘটনাগুলি পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে বলে, তার বলতে কষ্ট হচ্ছে। এই ঘটনা গুলি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে না।” তিনি বলেন, “সংবিধানকে বাঁচাতে যতই বাধা আসুক না কেন, কেউ আমাকে বাধা দিতে পারবে না।”

রাজ্যপাল জানিয়েছেন, শপথ নেওয়ার সময় আমি বলেছিলাম, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে সুরক্ষা দিতে সব সময় আমি পাশে থাকব।” এছাড়াও রাজ্যপাল জানিয়েছেন তার নেওয়া সেই শপথ অনুযায়ী, তিনি হিংসা কবলিত এলাকা গুলিতে সফর করছেন। এছাড়াও রাজ্যপাল জানিয়েছেন, আগামীকাল শুক্রবার তিনি আসামের ত্রাণশিবির পরিদর্শনে যাবেন। এছাড়াও তিনি আসামের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রাজ্যবাসীদের ফেরত আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিন তিনি আরও জানিয়েছেন, যত বাধা বিপত্তি আসুক না কেন আমি পশ্চিমবঙ্গবাসীর হয়ে লড়বো। আমি আগামীকাল আসাম ত্রাণশিবিরে যে করেই হোক পৌঁছাব। আসাম ত্রাণশিবিরে যেসব বাসিন্দারা রয়েছে, তাদের হয়ে প্রয়োজনে নিজের বুকে গুলি খেতেও প্রস্তুত আমি, জানিয়েছন রাজ্যপাল।