holi, festival, history of holi, হোলি, উৎসব, হোলির ইতিহাস
হোলি তো খেলে থাকেন, কিন্তু জানেন কি স্থান ভেদে হোলির একাধিক ইতিহাস?

পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর দোল হল বাংলা বছরের শেষের উৎসব। একে বাঙালিরা বসন্ত উৎসবও বলে থাকে। বাঙালি ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই দোল উৎসব পালন করে। তবে দোল বাদ বাকি ভারতে হোলি নামে পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রীতি ও বিভিন্ন বিশ্বাসের সাথে হোলি উদযাপিত হয়ে থাকে। যেমন গোটা বাংলা ও বাংলাদেশ জুড়ে হোলির উদযাপনে বৈষ্ণব রীতি প্রাধান্য পেয়েছে।

হোলি মূলত রঙের উৎসব। তবে এই হোলি উৎসবটি দুইটি ভাগে বিভক্ত। একটির নাম হোলিকা দহন ও পরের দিন রং খেলা। তবে বাংলার কোথাও কোথাও হোলিকা দহনকে ন্যাড়া পোড়া বা বুড়ির ঘর নামেও ডাকা হয়ে থাকে। ন্যাড়া পোড়া হলো শুকনো গাছের শুকনো ডাল, কাঠ, কলার শুকনো পাতা ইত্যাদি দাহ্যবস্তু দ্বারা সু-উচ্চ একটা থাম বানিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দহন উৎসব পালন।

এই হোলিকা দহনের একটি সামাজিক তাৎপর্য আছে। দোল মূলত ঋতুচক্রের শেষ উৎসব। এই সময়ে পাতাঝরা উদ্ভিদের শুকনো ডালপালা, পাতা, জঞ্জাল ইত্যাদি জড়ো করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পুরনোকে সরিয়ে নতুনের আহ্বান জানানো হয়।

তবে এই হোলিকা দহনের একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। বিষ্ণু পুরানে বর্ণিত দৈত্যরাজ হিরণ্যকিশপুর কাহিনি আমাদের সকলের কম বেশি জানা। হিরণ্যকিশপুর পুত্র প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও বিষ্ণু পূজারী ছিলেন। সেই কারণে তার পিতা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও যখন তাকে হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর তার বোন হোলিকাকে নির্দেশ দেন যেন সে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে যেন আগুনে প্রবেশ করে। হোলিকা দেবতাদের কাছ থেকে এই বর পেয়েছিলেন যে আগুন তার শরীর স্পর্শ করতে পারবেনা। কিন্তু অন্যায় কাজে নিজের শক্তি প্রয়োগ করায় বর থাকা সত্বেও হোলিকা সেই আগুনে পুড়ে যায় কিন্তু প্রহ্লাদের কোনো ক্ষতি হয় না। অশুভের বিনাশের এই ঘটনাকে হোলিকা দহন বলা হয়।

অন্যদিকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তার মামা অসুর রাজ কংস সমস্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। সেই রকমই কেশি নামক এক অসুর বসন্তের পূর্ণিমার দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে হত্যা করতে এসে নিজেই মারা পড়ে। যদিও কোথাও কোথাও এই অসুরের নাম নিয়ে মতান্তর রয়েছে।

কোনো কোনো স্থানে এই অসুরের নাম অরিষ্টাসুর বলেও বর্ণিত আছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হাতে এই অন্যায়কারী, অত্যাচারী অসুরের মৃত্যুর পর তার রক্ত ছিটিয়ে উপস্থিত সকলে আনন্দে মেতে ওঠেন। এই কারণেও এই দিনটিকে রঙের উৎসব বলেও মানা হয়ে থাকে।

তবে ভারতের মতো বিশাল দেশে অঞ্চল ভেদে হোলি বা দোল উদযাপনের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এই উৎসব সৃষ্টির ইতিহাসের ভিন্নতা থাকলেও এই উৎসব উদযাপনের রীতি মোটের উপর একই। ঐতিহাসিকরা মনে করেন করেন, পূর্ব-ভারতে আর্যরা এই উৎসব পালন করতেন। যুগে যুগে এর উদযাপন রীতি পরিবর্তিত হয়ে এসেছে মাত্র।

তবে হোলি উৎসবের উৎপত্তির সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পৃক্ততার ইতিহাস লক্ষণীয়। শোনা যায়, তিনি বৃন্দাবনে থাকাকালীন তার সখীদের সঙ্গে দোল উৎসবে মেতে উঠতেন। যা পরবর্তীতে, সময়ের সাথে সাথে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়ে আজকের হোলির রূপ নিয়েছে। মধ্যযুগীয় বিভিন্ন চিত্র কলাতেও রাধা কৃষ্ণের এই রঙের উৎসব বার বার উপজীব্য হয়ে উঠেছে।

তবে রাধা কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে হোলির আজকের এই অতি বৈষ্ণবীয় আচার যথেষ্ট প্রশ্ন যুক্ত। কারণ শ্রীকৃষ্ণ মাত্র ১২ বছর বয়সে বৃন্দাবন ত্যাগ করেছিলেন, যেখানে পরবর্তীতে তিনি আর কখনোই ফিরে যান নি। তাহলে তিনি হোলি উৎসবের প্রচলন কিভাবে করে থাকবেন? তবে বহু বৈষ্ণব গবেষকদের মতে শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন থেকেই যে দোল কথার উদ্ভব হয়েছে তার মান্যতা দিয়েছেন।