পশ্চিমবঙ্গ ডেস্কঃ প্রবাল গতি নিয়ে বাংলার দিকে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস (yaas) । আজ সোমবার সকাল ৯ টা নাগাদ আবহাওয়া দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের উপর সৃষ্ট নিম্নচাপ তার গতি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস -এ পরিণত হয়ে গিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এর জেরে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি যাতে এড়ানো যায়, সেইজন্যই গতকাল উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তার গতি বাড়িয়ে উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দীঘা থেকে প্রায় সাড়ে ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করেছে। যা ধীরে ধীরে বাংলার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় আজ বৈঠকে বসলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন আজ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবে না বলে প্রথমে জানা গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই বৈঠক এ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব উপস্থিত থাকবেন বলেই জানা গিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী খোদ এই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগদান করেন।
তবে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাথে তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর মোকাবিলায় আগাম ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়াও ওই বৈঠকে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এর মোকাবিলায় কি কি করণীয় তা নিয়েও পরামর্শ দান করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এ দিনের বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ঝড়ের পর অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহের সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষত কোভিড এর কথা মাথায় রেখে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আগে থেকেই মজুদ রাখতে হবে। পরিস্থিতি যদি খুবই খারাপ হয় তাহলে ঝড় কবলিত এলাকাগুলি থেকে যাতে রোগীদের সরিয়ে আনা যায় সেই ব্যবস্থা করে রাখতে হবে রাজ্যকে।”
মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে অক্সিজেন-এর সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আবার ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হল অক্সিজেন উৎপাদন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পরামর্শ দেন, “যেন কোনোভাবেই রাজ্যের অক্সিজেন প্ল্যান গুলি বন্ধ না হয়ে যায়। সেদিকে নজর রাখতে হবে।”
সংবাদ মাধ্যমের মধ্য দিয়েও রাজ্যের মানুষকে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। করোনা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হাসপাতালগুলিতে যাতে কোনরকম ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায় সেদিকেও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ২৪ ঘন্টার কন্ট্রোলরুম খুলেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এই কন্ট্রোল রুম থেকে সাহায্য পাবে রাজ্য।”
ঠিক আগের বছর এমন সময়েই লন্ডভন্ড চালিয়েছিল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফান। যার ফলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বাংলার মানুষের। আমফানের সময় কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছিল। তবে আমফানের সেই ত্রাণ চুরি করেছে বলে রাজ্যের শাসকদলের উপরেই উঠেছিল অভিযোগ। তাই এবার ত্রাণ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য সহায়তার জন্য এনসিসি ও সিভিল ডিফেন্স-কে কাজে লাগাতে হবে।’