পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হুগলির বলাগড় এর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করেছিলেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। সেখানে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। মাস দুয়েক হতে গেল তিনি তৃণমূলের বিধায়ক পদে নিযুক্ত হয়েছেন। তবে ইতিমধ্যেই বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়কের গলায় অন্য সুর।
এদিন তিনি একটি ফেসবুকে পোস্ট করে বলেন, রাজনীতিতে এসে বোধ হয় তিনি ভুল করেছেন। তবে তার এই পোস্টকে ঘিরেই ইতিমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
একসময় মনোরঞ্জন ব্যাপারী রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। তবে এখন অবশ্য তিনি একটি টোটো কিনেছেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করে বিধায়ক হবার পর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য টোটোই একমাত্র সঙ্গী তার। এছাড়াও তার সুপরিচিতি রয়েছে লেখক হিসেবেও।
তবে কেন তিনি ফেসবুকে এমন পোস্ট করলেন? মনোরঞ্জন ব্যাপারী এদিন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “আমি হাঁপিয়ে যাচ্ছি। সত্যিই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে রাজনীতিতে এসে আমি বোধহয় ঠিক করিনি। যখন দূরে ছিলাম, যখন তেমন ভাবে কিছু জানতাম না, খানিক সুখে ছিলাম। এখন সব দেখে জেনে – সরাসরি যুক্ত হয়ে আর কোনো রাতেই ভালো মতো ঘুমাতে পারছি না।কী এক কষ্টে মাঝরাতে উঠে পায়চারী করতে বাধ্য হই।”
এছাড়াও তিনি আরও লিখেছেন, “এত অভাবী দু্ঃখী মানুষ, এতো তাদের সমস্যা। তাদের সকল আশা ভরসার কেন্দ্রে এখন এসে দাঁড়িয়ে পড়েছি আমি। আমাকে ঘিরে তাদের অনেক আশা প্রত্যাশা। যেন আমার কাছে কোন জাদুকাঠি আছে যা দিয়ে তাদের সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারি। যে বেকার সে ভাবছে চাইলেই আমি তাকে একটা চাকরি দিয়ে দিতে পারি, যার ভাঙা ঘর তাকে দিতে পারি একটা মাথা গোঁজার সুন্দর আবাস। যে অসুস্থ তাকে দিতে পারি সুচিকিৎসা।”
এখানেই থেমে থাকেনি হুগলি জেলার বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তিনি আরও লিখেছেন, “সেই আশায় তারা সূর্য ওঠার সাথে সাথে এসে আমার দরজায় দাঁড়িয়ে পড়ছে। যে ভিড় রাত এগারোটা বারোটার আগে কম হয়না। তাদের কাতর কান্না, হাহাকার আমার বুকে যেন ধারালো চাকুর মতো চিরে চিরে বসে যায়। রক্ত ক্ষরন ঘটায়।”
এর পাশাপাশি তিনি আরও লেখেন, “ওরা আমাকে ঈশ্বরের সমতুল শক্তিমান বলে মনে করে, যার কাছে যা চাওয়া যায় তা পাওয়া যায়। কিন্তু আমি যে অতি তুচ্ছ নগন্য একজন মানুষ। আমি যদি পারতাম তাহলে সবার সব চোখের জল সব হাহাকার, না পাবার বেদনা এক নিমিষে মুছে দিতাম। ওরা আমাকে ঈশ্বর ভাবছে কিন্তু আমি যে সেই খড় মাটি রঙের একটা মুর্তী ছাড়া আর কিছুই নই।”
সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন রাজনীতিতে এসে বোধহয় তিনি বড় ভুল কাজ করেছেন তা বলাই বাহুল্য।