পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে শাসকদল বিরোধীদের অপদস্থ করছে বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই চিঠির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই, সেই সিবিআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠালেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে নন্দীগ্রামের এই বিজেপি বিধায়কের অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ঠিক উল্টো।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চিঠি লিখেছেন, শুভেন্দু অধিকারী ঠিক তেমনি অভিযোগ করেছেন যে বাংলার সিবিআই আধিকারিকেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার পদের জন্য সমীহ করে চলছেন।
যার কারণে সিবিআই অফিসারেরা সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রের সংস্থা সিবিআই কি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদকে ভয় পাচ্ছে? তা না হলে সারদা মামলার দশ বছর পরও কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত শুরু করছে না!’’
রবিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও আরো সাতজন বিরোধী দলনেতা প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছিলেন। তার প্রত্যেকটি চিঠিতেই অভিযোগ রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর নামে। বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন যে শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি নারদা মামলায় অভিযুক্ত। তাছাড়া যে সমস্ত নেতা নেত্রীরা বিরোধী দল থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা থাকা সত্ত্বেও সে সমস্ত মামলার তদন্ত গতি পাচ্ছে না।
বিরোধীদের দ্বারা এমন চিঠি প্রেরণের পরেই সোমবার শুভেন্দু অধিকারী নিজে পাঁচ পাতার একটি চিঠি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। উক্ত চিঠিতে তিনি সারদা মামলায় মমতা বন্দোপধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি প্রধনমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, সারদা মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের কোন কোন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআইয়ের কি বক্তব্য। কেনো দশ বছরে পরে মামলায় বেশ কিছু অংশ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘সারদার সঙ্গে মমতার সম্পর্ক তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বহু আগে থেকে’’।
চিঠিতে তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘২০১৪ সালে সারদা মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছিল, যেহেতু এই মামলায় শাসকদলেরই বহু প্রভাবী জড়িত, তাই রাজ্য পুলিশকে এই মামলার তদন্তভার না দিয়ে সিবিআইকে দেওয়া হোক। আশা ছিল, এই মামলার মূলে যিনি বা যাঁরা, তাঁকে বা তাঁদের পদমর্যাদায় প্রভাবিত না হয়ে সিবিআই প্রকাশ্যে আনবে। কিন্তু তা হয়নি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সারদা মামলায় সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে যাঁর, তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করার ব্যাপারে সিবিআই উদাসীন। এর কারণ কি সিবিআই পদকে সমীহ করে চলছে?’’
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, সিবিআই একসময় জানিয়েছিল মমতার আঁকা ছবি সারদা গোষ্ঠীর তরফে কোটি টাকায় কেনা হয়েছে। এমনকি মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের আইআরসিটিসির সঙ্গে সারদার ট্যুরের প্রসঙ্গও এনেছেন। নাম না করে উল্লেখ করেছেন সারদার সংবাদ মাধ্যমগুলির প্রাক্তন গ্রুপ সিইও তথা তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন সাংসদ কুণাল ঘোষের গ্রেফতারির প্রসঙ্গও। শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, গ্রেফতার হওয়ার সময় ওই সাংসদ বার বার বলেছিলেন, সারদা কেলঙ্কারিতে সবচেয়ে বড় সুবিধাপ্রাপ্ত এর নাম হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরও সিবিআই চুপ কেনো?