পশ্চিমবঙ্গ ডেস্কঃ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের পিঠ ঠেকে গিয়েছে দেওয়ালে। গতকাল পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে নামেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। সকালে তিনি ইলেকট্রিক স্কুটার এ করে নবান্নে যান। চালক হিসেবে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
তিনি নবান্ন থেকে বাড়ি ফিরেছেন ইলেকট্রিক স্কুটার করেই। তবে এবার তিনি ব্যাকসিটে বসে নয়। স্কুটার চালক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছিল। ইলেকট্রিক স্কুটার চালিয়ে নবান্ন থেকে বাড়ি ফেরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে স্কুটারটির ধীরগতিসম্পন্ন ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি এই প্রথমবার স্কুটার চালালেন। মমতা স্কুটারে করে নবান্নে পৌঁছানোর পর যেমন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তেমনি নবান্ন থেকে বাড়ি ফেরার পর মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আরও একবার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি।

একাধিকবার পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে। গতকাল সন্ধ্যায় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “ডিজেল প্রাইস হাইক, পেট্রল প্রাইস হাইক, এলপিজি গ্যাস প্রাইস হাইক, কেরোসিন প্রাইস হাইক, এর বিরুদ্ধে আজকে আমরা নিরবে প্রতিবাদ করলাম। নবান্নে যাওয়ার সময় স্কুটার এ গিয়েছিলাম সঙ্গে ছিল কলকাতার মেয়র। আমার অনুরোধে তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন। পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমও আমাদের সঙ্গে ছিল”।
তিনি আরো জানিয়েছেন, “আপনারা কিন্তু সবাই দেখেছেন, আমি আজ প্রথমবার স্কুটার চালালাম। এখন তো খুবই সহজ হয়ে গেল, এবার থেকে যেকোনো জায়গায় চলে যাব একা একা। কে কখন খুজে বেড়াবে আমায়। কোথায় ধরবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। একদিনে এতটা শিখে গেছি, তার জন্য মা-মাটি-মানুষ কে ধন্যবাদ জানাই।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘যখন ক্রুড অয়েলের দাম ১০০ শতাংশের উপরে ছিল তখন এতটা বাড়েনি পেট্রোপণ্যের দাম। তবে বর্তমানে ক্রুড অয়েলের দাম ৫০ শতাংশ ইন্টার্নেশনাল মার্কেটে কমে যাওয়ার পর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ’। এই দাম গুলি কেন বাড়ছে, কিভাবে বাড়ছ, কোথা থেকে বাড়ছে, এর পিছনে বড় রহস্য লুকিয়ে আছে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
এলপিজি গাসের দাম বৃদ্ধির ফলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘একটা বাড়িতে মিনিমাম দুটো এলপিজি গ্যাস সিলেন্ডার ব্যবহার করা হয়। এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৫ টাকা। দুটি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১৬৫০ টাকা। যদি রান্নাঘরের গ্যাস কিনতে ১৬৫০ টাকা ফুরিয়ে যায়। তাহলে বাজার ঘাট করবে কি করে, খাবে কি, ছেলে মেয়ের পড়াশোনা চলবে কি করে, রাস্তাঘাটে চলাচল করবে কি করে। মোদি সরকার যখন ক্ষমতায় আসেনি তখন এলপিজি গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়াতে বাড়াতে এখন দাঁড়িয়েছে ৮০০ টাকা। এবার রান্না ঘরে আগুন লাগিয়েছে মোদী সরকার’।

রাজ্যে ২ কোটি মানুষের কেরোসিনের প্রয়োজন। কিন্তু তারা কেরোসিন পাচ্ছে না। কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে বেশি দামে কেরোসিন কিনতে হবে। এটাকি সম্ভব? যারা গরীব তারা কেরোসিনে রান্না করে। যারা খুবই গরীব তারা কেরোসিন, কয়লা, কাঠ দিয়ে রান্না করে। যারা চাকরি-বাকরি পেয়েছে সুবিধার জন্য বাড়িতে গ্যাস ব্যবহার করে। বাড়াতে বাড়াতে এলপিজি গ্যাসের দাম দ্বিগুন এর থেকেও দ্বিগুণ করেছে মোদি সরকার। এ ভাবে দেশ চালানো যায়না মোদী বাবু, কটাক্ষ মমতার।
রাজ্যে প্রায় প্রতিদিনই এক একটি বিজেপি নেতা আসছে। এই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রশ্ন করলে কোন কথা বলেনা। ‘পেট্রোলের দাম কেন বাড়লো? উত্তর নেই, ডিজেলের দাম কেন বাড়লো? উত্তর নেই, এলপিজি গ্যাসের দাম কেন বাড়লো? উত্তর নেই’। এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছে ‘চাইনা চাইনা বিজেপিকে চাই না’।
তিনি চড়া গলায় জানালেন, ‘পেট্রোলের দাম বাড়ানো, ডিজেলের দাম বাড়ানো, কেরোসিন তেলের দাম বাড়ানো, চলবে না। এক্ষুনি দাম কমাতে হবে। এলপিজি গ্যাসের দাম ৮০০ টাকা করেছে। সেটা এক্ষুনি কমিয়ে চারশো টাকা করতে হবে।আর সেটা যদি না করা হয়। তাহলে আমরা কিন্তু চুপ করে বসে থাকব না’। আন্দোলনের পর আন্দোলন করবো। এমনটাই জানিয়েছেন মমতা।