বিশ্বকাপ ফুটবলঃ- ২০২২ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ৩-০ গোলের ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে পৌঁছে গিয়েছে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলাটা ছিল লুকা মদ্রিচ বনাম লিওনেল মেসি। অর্থাৎ এল এম টেন বনাম এল এম টেন। দুই দলের বিশ্বসেরা দুই তারকা খেলোয়াড়। তবে মদ্রিচকে পরাজিত করে বিশ্বকাপে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে নিলেন লিওনেল মেসি। দলের হয় সেরা ফুটবল খেলেন লুকা মদ্রিচ। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেন মেসি এবং একটি গোলও করান তিনি। দলের হয় পেনাল্টি থেকে প্রথম গোলটি করেন তিনি। অন্য দুটি গোল করেন হুলিয়ান আলভারেজ।
বিশ্বকাপের অন্যতম হট ফেভারিট দল ব্রাজিলকে পরাজিত করে সবাইকে চমকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে বাজিমাত করে মদ্রিচ বাহিনী। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলতে গিয়ে বড় ভুল করে বসলো জ্লাটকো দালিচের ছেলেরা। প্রথমার্ধের ৩০ মিনিট বল নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখলেও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া দল। প্রথম ৩০ মিনিট পিছিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিট ম্যাচের রং বদলে দেয় আর্জেন্টিনা। জোড়া গোল করে ম্যাচের ব্যবধান বাড়িয়ে দেয় মেসিরা। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। এই বছরের বিশ্বকাপে সেরা পারফরমেন্স করে আলবিসেলেস্তেরা। আক্রমণভাগ থেকে শুরু করে রক্ষণভাগ দুটোই ছিল দুর্দান্ত। মোট ৬ বার বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলে ৬ বারই জয়লাভ করে নিজেদের রেকর্ড অক্ষত রাখল আর্জেন্টাইন দল।
বিশ্বকাপের অন্য দলগুলোর মত মেসিকে ম্যান মার্কিংয়ে রেখেছিল ক্রোয়েশিয়া। তার পায়ের কাছে বল গেলে তিন থেকে চার জন নীল জার্সিধারী খেলোয়াড়রা ছুটে আসছিলেন তার দিকে। তারপরেও ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলো না মেসিকে। যত খেলা গড়াতে লাগলো ততোই রক্ষণভাগ ভেঙে ছিটকে বেরাচ্ছিলেন মেসি। গোলও করলেন এবং গোলের সুযোগ তৈরীও করলেন তিনি। গোটা ৯০ মিনিট পরিশ্রম করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন নিজের জীবনের শেষ বিশ্বকাপটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সবকিছু করতে তৈরি এল এম টেন।
প্রথমার্ধে খেলা শুরুর থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজ নিয়ে মাঠে খেলতে নামে ক্রোয়েশিয়া দল। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেললেও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাদের পরিকল্পনা ছিল পুরো উল্টো। প্রেসিং ফুটবল খেলেছিল তারা। ফলে বলেন নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। মাঠের দুই ধার ব্যবহার করে আক্রমণ তুলে আনছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ ছিল সজাগ। অনেক আক্রমণের পরেও গোল হজম করেনি তারা ।
৩৩ মিনিটের মাথায় পাল্টা আক্রমণে বক্সের ভেতর আলভারেসকে ফাউল করে বসলেন ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ। ফলে পেনাল্টি সিদ্ধান্ত দেন ম্যাচ রেফারি। এদিন পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করতে ভুল করলেন না লিওনেল মেসি। গোলরক্ষককে ডানদিকে পরাস্ত করে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।
বিশ্বকাপে দলের হয়ে এটি ছিল তার পঞ্চম গোল। একইসঙ্গে বিশ্বকাপে ১১ টি গোল করে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিক গোলদাতার রেকর্ডটি ছুঁয়ে ফেললেন তিনি। ৫ মিনিট পরেই একটি নজরকাড়া গোল করলেন হুলিয়ান আলভারেস। প্রতি আক্রমণে প্রায় ৫৫ গজ দূরে বক্সের বাইরে তিনজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে জালে বল জড়ান তিনি। তাকে আটকাতে ব্যর্থ হয় ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগ। প্রথমার্ধে ২-০ গোলের ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হতেই আক্রমণের ডানা মেলতে শুরু করে দেয় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ ছিল বেশ শক্ত। ফলে গোলের মুখ খুলতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে হঠাৎ প্রতি আক্রমণে উঠেছিল মেসি বাহিনী। সময় যত গড়াচ্ছিল ততোই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাচ্ছিল ক্রোয়েশিয়া।
৭০ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় গোলটি তুলে নেন আলভারেস। তবে গোলটির কৃতিত্ব আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৮০ মিনিটের মাথায় মদ্রিচকে তুলে নেন কোচ দালিচ। নিজের শেষ বিশ্বকাপে খালি হাতেই ফিরতে হলো তাকে । গতবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে দলকে তুলেছিলেন তিনি, তবে ফাইনালে পরাস্ত হতে হয় ফ্রান্সের কাছে। দলের হয় শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও ব্যর্থ হতে হলো তাকে। ৩-০ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল মেসি বাহিনী।