পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ মনের জোরে সব সম্ভব, এই কথাটি প্রমাণ করে দিলেন উত্তর ২৪ পরগনার রিনি ভট্টাচার্য। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও নকল পা-এর সাহায্যে সিন্থেসাইজার বাজিয়ে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করলেন তিনি।সকল বাধাকে জয় করে স্বমহিমায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রিনি। জিতে নিয়েছেন ২০১৯ সালের জাতীয় পুরস্কার। উত্তর ২৪ পরগনার টাকির থুবা গ্রামে বাসিন্দা তিনি। শুধু সিন্থেসাইজারই নয়, অসাধারণ ছবি আঁকার সাথে সাথে সেলাইয়ের কাজেও নিপুনা রিনি।
পা দিয়ে সিন্থেসাইজার বাজানোর বিষয়ে নিয়ে রিনি বলেন, প্রথম থেকেই মনে হত, যে কোনও কাজ আমি পা দিয়ে সহজে পারব। প্রথম যখন সিন্থেসাইজার শেখা শুরু করি তখন শিক্ষক বুঝতে পারেননি। আমাকে হাত দিয়েই বাজাতে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু কনুইয়ের নীচ থেকে হাত না থাকায় টানা বাজাতে পারছিলাম না। হাত তুলে তুলে বাজাতে গিয়ে ছন্দ কেটে যাচ্ছিল। একদিন প্র্যাক্টিসের সময়ে মনে হল পা দিয়ে বাজিয়ে দেখি। এখন তিনি তার পা দিয়েই এমন নিখুঁতভাবে সিন্থেসাইজারে সুর তুলতে পারেন যা শুনে মোহিত হবেন যে কেউ।
বছর কুড়ি রিনির এই চলার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। নিজের আত্মবিশ্বাসের জোরে তিনি সমস্ত বাধাকে জয় করেছেন। এই আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং চিকিৎসকরা পাশে থাকায়। তার জন্মের পর যখন তার বাবা মুকুল ভট্টাচার্য এবং মা শর্মি ভট্টাচার্য জানতে পারেন তাদের মেয়ে ১০০ শতাংশই প্রতিবন্ধী তখন তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
তারা চিন্তিত ছিলেন মেয়ের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটা নিয়ে। সেই সময় তারা সন্ধান পান বরানগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর লোকোমোটোর ডিজএবিলিটিসের এক চিকিৎসকের। যিনি রিমিকে এক বছর বয়স থেকেই চিকিৎসা করছেন। ওই চিকিৎসকই রিনির নকল পায়ের ব্যবস্থা করে দেন। বর্তমানে সেই নকল পা দিয়েই একবারের জন্যও সিন্থেসাইজারের দিকে না তাকিয়ে অনায়াসে বাজিয়ে যেতে পারেন রিনি।
এখানেই শেষ নয় শিল্পের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও তিনি অত্যন্ত ভালো। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে রিনি স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার সঙ্গে ২০১৬ সালে রবীন্দ্র সংগীতে সিনিয়র ডিপ্লোমা কোর্স কমপ্লিট করেছেন। ২০১৭ সালে সম্পূর্ণ করেছেন রবীন্দ্র সংগীত বিশারদ হিসেবে প্রথম পার্ট। ভবিষ্যতে তিনি বিমানবন্দর কিংবা রেলস্টেশনের ঘোষিকা হতে চান। পড়াশোনা শেষের পর তার জন্যই প্রস্তুতি নিতে চান রিনি।
রিনি আরও বলেন, পায়ে পেনসিল নিয়ে আমার হাতেখড়ি হয়েছিল। খেতেও শিখেছিলাম চামচ পায়ে ধরে। এখন প্রয়োজনমতো পা এবং কনুই ব্যবহার করি। কখনও এটা মনে হয়নি যে আমি আর পাঁচটা মানুষের থেকে আলাদা। তার বক্তব্য, যত পুরস্কার জিতেছি ততই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এখন প্রতিযোগিতা আমাকে আনন্দ দেয়।