পশ্চিমবঙ্গ ডেস্কঃ বঙ্গে একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে কোচবিহারের শীতলকুচি। ১০ ই এপ্রিল চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণের দিন রণক্ষেত্রের ময়দান সৃষ্টি হয়েছিল কুচবিহার শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে।
সকাল সকাল ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় ১৮ বছরের তরুণ যুবক আনন্দ বর্মনের। ওই দিন ফের বেলা দশটা নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের গুলিতে মৃত্যু হয় আরও চারজন গ্রামবাসীর। আনন্দ বর্মনের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছিল, তারা সকলেই বিজেপি সমর্থক। আনন্দ বর্মন এর মৃত্যুতে, গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
আনন্দ বর্মনের পরিবারের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আনন্দ বর্মনকে গুলি করে হত্যা করেছে। শীতলকুচির এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরের দিনই কোচবিহার যেতে চেয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কমিশনের নির্দেশ মান্য করে, ওই ঘটনার ৭২ ঘন্টা পরে তিনি কোচবিহারের মাথাভাঙাতে গিয়ে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের পরিবারকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাথে দেখা করতে নারাজ ছিলেন আনন্দ বর্মন-এর পরিবার। সেদিন তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন আনন্দ বর্মনের দাদু। নাতির হয়ে দোষীদের কে শাস্তির দাবি চেয়ে ছিলেন তিনি। অন্যদিকে আনন্দ বর্মন এর পরিবার একটি বেসরকারি সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়ে, ছেলের খুনের জন্য কাঠ গড়ায় তুলেছিলেন তৃণমুলকেই এবং মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চাকরি নেবেন না বলেও জানিয়েছিলেন আনন্দ বর্মনের মা ও তার পরিবার।
গত বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করার পর, নয়া পদক্ষেপ নিলেন। রাজনৈতিক হিংসা রুখতে প্রশাসনকে সব রকমের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। অন্যদিকে তিনি ঘোষণা করেছেন, “রাজনৈতিক হিংসায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”
এছাড়াও শীতলকুচি নিয়ে আলাদা করে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শীতলকুচি এর ঘটনায় মৃতদের পরিবারের সদস্যকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চাকরি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
মৃত আনন্দ বর্মনের পরিবার আগেই জানিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া কোনও সাহায্য বা চাকরি তারা গ্রহণ করবেন না। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চাকরি নিতে স্বীকার করলেন আনন্দ বর্মনের মা ও তার পরিবার। আনন্দ বর্মনের মা বাসন্তী বর্মন এদিন বলেন, “আমরা পুরনো কোনো কথা ধরে রাখতে চাইছি না। মুখ্যমন্ত্রী চাকরি দিচ্ছেন। সেই চাকরি আমরা নেব। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া অর্থসাহায্য আমরা গ্রহণ করব।”
গতকাল শুক্রবার, আনন্দ বর্মনের মা, দাদা ও মামা কোচবিহারে তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থ প্রীতম রায় এর সঙ্গে দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চাকরির বিষয়ে আনন্দ বর্মণের দাদা গৌতম বর্মন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সকলের! তাই তিনি যখন নিহত ৫ জনের পরিবারকে এই সহযোগিতা করছেন, তাহলে অবশ্যই সেই সহযোগিতা আমরা গ্রহণ করব। দোষীদের শাস্তির দাবিও করছি। পুলিশ তদন্ত করছে অবশ্যই দোষীদের শনাক্ত করবে।”
মৃত আনন্দ বর্মনের দাদা গৌতম বর্মন রাজ্য সরকারের দেওয়া হোম গার্ডের চাকরি নেবেন বলে জানা গিয়েছে। কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থ প্রীতম রায় এ বিষয়ে বলেন, “কারও মা, বোন, স্ত্রী বা দাদার চাকরি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতেই ওঁরা এসেছিলেন। আনন্দ বর্মনের পরিবারকে সেদিন ভুল বুঝিয়েছিল বিজেপি।”