পশ্চিমবঙ্গ ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর জেরে লকডাউন ঘোষণা করা হয় দেশজুড়ে। তার ফলে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। অনলাইন ক্লাস চললেও দামি মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাস করার মত সামর্থ্য হয়নি অনেকেরই।
এক অভিনব দৃশ্য ফুটে উঠল বর্ধমানের মেমারির খড়গ্রামে। বাবা শরৎ চন্দ্র ঘোষ পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক। তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর একের পর এক রোগ ওনার শরীরে বাসা বেঁধেছে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। একমাত্র বাড়িতে উপার্জন করার মত শরৎবাবুই ছিলেন। শরৎ বাবুর পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন। স্ত্রী এবং শরৎ বাবুর এক ছেলে ও মেয়ে এই নিয়েই তাদের ছোট্ট সংসার।
লকডাউন এরপর থেকে সংসারের হাল একেবারেই নাজেহাল। সংসারের হাল ধরতে এগিয়ে এল সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া সুমন ঘোষ। ভাঙা সাইকেলের পেছনে ক্যারেট বেঁধে রসগোল্লা বিক্রি করতে নেমেছে গ্রামে গ্রামে। এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা খেলা হলে আগে থেকে খোঁজ নিয়ে রাখে সুমন। ঠিক টাইমে তার চলমান মিষ্টির দোকান নিয়ে হাজির হয় সেই স্থানে।
সুমন জানায়, সে প্রতিদিনই মিষ্টি বিক্রি করতে যাবার আগে প্রাইভেট টিউটরের কাছে গিয়ে পড়াশোনা সেরে নেয়। তারপর সে সাইকেলে করে মিষ্টি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। সেখান থেকে ফিরে এসে আবার পড়াশোনা করতে শুরু করে।
শরৎ বাবুর ছেলে সুমন আরও জানিয়েছে, “রেশন থেকে চাল আলু সবকিছুই পায়। সেটা দিয়ে সংসার চলে কিন্তু পড়াশোনা, বাবার ঔষধ ছাড়াও আরও নানান খরচ রয়েছে সেগুলো চালাতেই মিষ্টি বিক্রি করতে নেমেছি।” শরৎবাবুই বাড়ির একমাত্র উপার্জন করা মতো ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সুমন, তার মা নয়নমনি দেবীকে বাড়িতে মিষ্টি বানাতে বলে। সেই মিষ্টি সাইকেলের পিছনে ক্যারেট বেঁধে নিয়ে আশেপাশের গ্রাম গঞ্জে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে সুমন। সুমন জানায়, দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মিষ্টি বিক্রি করে সে। আর উপার্জনের সেই টাকা দিয়েই বাবার ঔষধ, সংসার এবং পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে সুমন।
শরৎ বাবু জানান, “ছেলে ছোট হলেও ছেলের বুদ্ধি হয়েছে, আমার স্বপ্ন ছিল ওকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবো। কিন্ত আমার যে অবস্থা তাতে হয়তো স্বপ্নপূরণ আর হবে না।” সংসারের হাল ধরতে নেমে পড়েছে সে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবছর শরৎ বাবু সুমনকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি অর্থের অভাবে। তবে স্কুল সুমনের পাশে ছিল। স্কুল থেকে সমস্ত সুবিধা তাকে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের তরফ থেকে তাঁকে ভর্তির ‘ফি’ ও দেওয়া হয়।