পশ্চিমবঙ্গ, তপস্বিনী দাস, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা, west bengal, tapaswini das, civil service exam
ছবি - সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ- পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। কথাটি সত্য প্রমাণ করলেন ওড়িশার তপস্বিনী দাস। দৃষ্টিশক্তি না থাকা সত্বেও সমস্ত রকম বাধা-বিপত্তিকে পরোয়া না করে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন তিনি।

স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তার চোখের সামনে পৃথিবীটা ছিল দৃশ্যমান। ডিএভি স্কুলে পড়তেন তিনি। তপস্বিনীর যখন সাত বছর বয়স, তখনই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। অসহ্য মাথাযন্ত্রণার জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

চিকিৎসক জানান, তপস্বিনীর একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছে। অন্যটিও সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। কাজেই তার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু তাতে তপস্বিনী চোখের অবস্থার উন্নতি তো হলোই না, বরঞ্চ তিনি সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন।

তার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, সঠিকভাবে চিকিৎসা না হওয়ার জন্য তপস্বিনী আজ দৃষ্টিহীন। তার এই অবস্থায় সর্বদা পাশে পেয়েছেন পরিবারের সদস্যদের। তার বাবা অরুণ কুমার দাস, ওড়িশা রাজ্য সরকারের একজন আধিকারিক ছিলেন। তার মা কৃষ্ণপ্রিয়া মহান্তি ছিলেন একজন শিক্ষিকা।

তার পরিবারের মতে, ছোট থেকেই পড়াশোনায় খুব মেধাবী ছিলেন তপস্বিনী। তার পড়াশোনায় যাতে কোনো রকম বাধা বিপত্তির সৃষ্টি না হয় সেজন্যই তার বাবা তাকে ডিএভি স্কুল ছাড়িয়ে ভর্তি করেন দৃষ্টিহীন ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে।

শুরু হয় তপস্বিনীর জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের। ব্রেইল পদ্ধতিতে আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছিল এই সাহসী মেয়েটি। নবম শ্রেণীতে তপস্বিনী ঠিক করে ফেলেছিলন যে, সে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসবে। তার এই স্বপ্নটি সাথে করে, সে এক এক করে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সকলকে চমকে দেওয়ার মতো ছিল তার পরীক্ষার ফল।

তপস্বিনী এখন শিক্ষার্জনে মগ্ন। ভুবনেশ্বরের উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়-এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ করছেন তিনি। এমএ করতে করতেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বসেছিলেন। আত্মবিশ্বাসের জোরে তিনি ঠিক করেছিলেন, দৃষ্টিশক্তিহীন হওয়ার জন্য বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা নেবেন না।

বাকি জেনারেল গ্রউপের ছাত্রছাত্রীদের মতোই তিনিও পরীক্ষা দেবেন এবং তাই করলেন। তিনিও জেনারেলে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ৫ লক্ষের বেশি ছেলেমেয়েরা এই পরীক্ষার জন্য বসেছিলেন। তারমধ্যে উত্তীর্ণ হন ২১৮ জন। মেধাতালিকায় সে ছিল ১৬১ নম্বর স্থানে। এ বাদেও তপস্বিনী ইউপিএসসি-তে সাফল্য অর্জন করতে চান।