kolkata fire, স্ট্র্যান্ড রোডে আগুন, কলকাতা অগ্নিকাণ্ড
ছবি - টুইটার থেকে।

পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ- গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিং-এ ভয়াবহ আগুনে মৃত্যু হল ৯ জনের। এসএসকেএম হাসপাতালে রাত একটা নাগাদ নটি মৃতদেহ এসে পৌঁছায়। তাদের মধ্যে ছিলেন রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মন্ডল, দমকলের চার কর্মী, পুলিশের এক অফিসার এবং আরপিএফ-এর একজন। রেলের দুই কর্মী গুরুতর ভাবে আহত হয়ে ভর্তি আছেন শিয়ালদার বি আর সিংহ হাসপাতালে। তবে সকলকে তখনই শনাক্ত করতে পারা যায় নি।

হাসপাতালে মৃতদের পরিবারের লোকজন এসে পৌঁছান। পুলিশ আধিকারিক অমিত ভাওয়ালের দেহ রাতেই সনাক্ত করতে পারা যায়। রেলের ডেপুটি সিসিএম পার্থসারথি মন্ডল-এর দেহ সনাক্ত করেন তার মেয়ে এবং জামাই। ডেপুটি সাহেবের গাড়ির চালক সোমনাথ চক্রবর্তীর মন্তব্য, স্যার প্রতিদিনই সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ নিচে নেমে আসতেন। আজ আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর থেকেই স্যারকে ফোন করা শুরু করি। কিন্তু স্যারকে ফোনে পাচ্ছিলাম না।

দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু জানান, তিনি রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ দেখে এসেছেন। তার বক্তব্য, লিফটে উঠে ১৩ তলায় পৌছে লিফটের দরজা খোলার পর আগুনে ঝলসে পুড়ে যান তারা। আমরা উপরে উঠে দেখি লিফটের মধ্যেই পাঁচজনের দেহ পড়ে রয়েছে। বাইরে পড়েছিল আরো দুজনের দেহ। পোশাক দেখে বোঝা গিয়েছে, তাদের মধ্যে চারজন দমকলকর্মী, এছাড়াও একজন আরপিএফ এবং একজন হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই। একজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায়নি।

kolkata fire, স্ট্র্যান্ড রোডে আগুন, কলকাতা অগ্নিকাণ্ড
ছবি – সংগৃহীত

পুলিশের দ্বারা জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যে ছটা দশ মিনিট নাগাদ আগুন লাগার ৪ ঘন্টা বাদে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততক্ষণে অগাধ ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা থেকেই অফিসের ভিতরে বেশ কয়েকজন কর্মী আটকে পড়েন। কিন্তু কিভাবে তাদের উদ্ধার করতে হবে সে বিষয়ে বোঝা যাচ্ছিল না বলে জানান পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বারংবার দমকলের লোকেরা এবং অফিসাররা উপরে ওঠার চেষ্টা করেন, কিন্তু রাত অব্দি আগুনের তীব্রতার জন্য উপরে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে যে ৭ জন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। কারণ বদ্ধ কোন জায়গায় আগুন লাগলে বাতাসে অক্সিজেনের থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তবে প্রশ্ন ওঠে বিল্ডিং অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় থাকার দরুন কিভাবে লিফট চলাচল অব্যর্থ ছিল? কিন্তু আগুন লাগার সাথে সাথেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কথা।

ঘটনাটির পর মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এটা রেলের জায়গা। কিন্তু তাদের কেউ আসেনি। সুজিত আমাকে জানিয়েছে, বিল্ডিং-এর নকশা চাওয়া হয়েছিল, সেটা পেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হত। কিন্তু সেক্ষেত্রে সহযোগিতা মেলেনি। দুর্ঘটনা নিয়ে আমি কোন রাজনীতি করতে চাই না। দমকলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঐদিন অগ্নিকাণ্ডের সময় কেন লিফট চলাচল অব্যর্থ ছিল সেই নিয়ে তদন্ত করা হবে।

সূত্রের খবর, গতকাল রেলের অফিসে ১৩ তলায় এসি ফেটে আগুন লেগে যায়। সেই সময় প্রায় ৫০০ জন কর্মী রেলের অফিসে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। পাশের এলআইসি বিল্ডিংয়ের কর্মীরা আগুন দেখতে পেয়ে আর্তনাদ করতে শুরু করে।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রেলের অনেক পুরনো ভবন। ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আগুন নেভাতে আসা সাতজনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এখনো দুজন-এর খোঁজ চলছে বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন। মৃতরা লিফটে করে উঠতে গিয়েছিলেন, সেখানে আগুন বিদ্যুতের ঝলকের মতো পুড়িয়ে দিয়েছে। খুব দুঃখজনক। মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ছাড়াও পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। সকলেই খুব লড়াই করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, তারা এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাবেন। অগ্নিকাণ্ডের পর সন্ধ্যার থেকেই পূর্ব রেলের সমস্ত রকম টিকেট বুকিং এর কাজ বন্ধ হয়ে যায়।