পশ্চিমবঙ্গ ডেস্কঃ ‘বন্ধু’ ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু দায়িত্বটা অনেক বড়। অনেকেই বলে থাকেন জিগরি দোস্ত অথবা প্রিয় বন্ধু। এই বন্ধুত্বের মর্যাদা সবাই দিতে পারে না।
ঝাড়খণ্ডের বোকারোতে বসবাসকারী শিক্ষক দেবেন্দ্র এবং দিল্লির নয়ডার বাসিন্দা রঞ্জন আগারওয়াল হলেন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। প্রিয় বন্ধু রঞ্জন এর শরীরে বাসা বেধেছে মারণরোগ। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় শ্বাসকষ্ট বেড়েছে তার। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু তার অক্সিজেন স্তরটি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। আরেকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার এর প্রয়োজন। তবে কোথাও মিল করা যাচ্ছিল না সেই অক্সিজেন সিলিন্ডার।
কোভিড চিকিৎসকরাও স্পষ্ট জানিয়েছেন, রঞ্জন বাবুকে বাঁচাতে হলে অতিসত্বর অক্সিজেনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু কোথাও মিল করা যাচ্ছিল না সেই অক্সিজেন। একটু একটু করে মৃত্যুর কবলের দিকে ধসে পড়ছে বন্ধু রঞ্জন। ঝাড়খণ্ডের বোকরার বাসিন্দা দেবেন্দ্র বাবুর কাছে এলো সেই খবর।
বন্ধু দেবেন্দ্র বাবুর কাছে খবর আসে নয়ডায় কোথাও মিলছেনা অক্সিজেন। কিন্তু বন্ধুর জীবন বাঁচাতে অক্সিজেনের প্রয়োজন। বন্ধুর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জানতে পেরে দেবেন্দ্র বাবু অক্সিজেন সিলিন্ডার এর ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বোকারোতে বেশ কয়েকটি অক্সিজেন সরবরাহ কারীদের কাছে যান। তবে দেবেন্দ্র বাবুর কাছে খালি সিলিন্ডার না থাকায় অক্সিজেন দিতে কেউ রাজি ছিল না।
বেশ কয়েকটি জায়গায় অক্সিজেন সিলিন্ডার এর জন্য ঘোরাঘুরি করে অক্সিজেন না পাওয়ার পরও তিনি হাল ছাড়েননি। তবে তার সেই কষ্ট বিফলেও যায়নি। অন্য এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে বিহার ঝাড়খন্ড ইস্পাত অক্সিজেন প্লান্টের অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করেন দেবেন্দ্র বাবু এবং তার বন্ধু অতিমারি করোনার সঙ্গে লড়াই করছে বিস্তারিত ঘটনাটি জানান।
তবে তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে রাজি হলেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য সুরক্ষিত অর্থ জমা দেওয়ার শর্ত রেখেছিলেন তারা। দেবেন্দ্র বাবু একটি জাম্বু সিলিন্ডারের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সিলিন্ডারটিতে ৪০০ টাকার অক্সিজেন ছিল এবং ৯৬০০ টাকা সিলিন্ডারের সুরক্ষা অর্থে দিয়েছিলেন।
বোকারো তে বসবাসকারী দেবেন্দ্র বাবু বন্ধুর জন্য অক্সিজেন জোগাড় করেছেন। তবে সেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নয়ডায় পৌঁছানো দরকার। তবে নয়ডায় কি করে পৌঁছবে সেই অক্সিজেন? ভাবনা চিন্তা না করেই দেবেন্দ্র বাবু বন্ধুর জীবন বাঁচাতে ঝাড়খন্ডের বোকারো থেকে ১৪০০ কিলোমিটার দূরে গাড়ি করে জীবনদায়ী অক্সিজেন পৌঁছে দিলেন।
অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নিজের গাড়ি করে রবিবার সকালে ঝাড়খন্ড বোকারো থেকে নয়ডার উদ্দেশ্যে রওনা দেন দেবেন্দ্র বাবু। প্রায় ২৪ ঘন্টা পর নয়ডায় পৌছে ছিলেন তিনি। যদিও তাকে রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু বন্ধুর প্রাণ বাঁচানোর বিষয়টি তাকে কোথাও আটকাতে পারেনি। সময়মতো পৌঁছে গিয়ে বোকারো থেকে নিয়ে যাওয়া সেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী অক্সিজেনের সিলেন্ডার পেয়ে রঞ্জন আগারওয়ালের অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে।
দেবেন্দ্র বাবু যখন সিলিন্ডার নিয়ে রঞ্জন বাবুর বাড়িতে পৌঁছালেন, তখন রঞ্জন বাবুর চোখ জলে ভরে উঠলো। রঞ্জন বাবু তার বন্ধুকে পেয়ে বলেন, আমার এমন বন্ধু থাকতে করোনা আমাকে বিন্দুমাত্র নিঃস্ব করতে পারবে না। এরপর বোকারো থেকে নয়ডায় পৌছে দেবেন্দ্র বাবু জানিয়েছেন তার বন্ধু রঞ্জন পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোথাও যাবেন না।