পশ্চিমবঙ্গ ডিজিটাল ডেস্কঃ- অনিমেষ তিওয়ারি পেশায় কর্মশিক্ষার শিক্ষক। তিনি প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে কর্মরত। কিন্তু নথি অনুযায়ী অনিমেষের নিয়োগপত্রের মেমো নম্বর দিয়েই অন্য এক জনের নিয়োগপত্র জারি করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আর বর্তমানে অনিমেষ যে-স্কুলে শিক্ষকতা করছেন, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হলেন অনিমেষের বাবা।
একই নিয়োগপত্রে নিযুক্ত হয়েছেন দুজন শিক্ষক। তার মধ্যে অনিমেষ তিওয়ারি ভূগোলের শিক্ষক, কিন্তু তিনি স্কুলে কর্মশিক্ষার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। নিয়োগ-দুর্নীতি কাণ্ডে উঠে এলো এমনই এক অদ্ভুত ঘটনা। আম জনতা বিষয়টিকে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে বলে ব্যঙ্গ করতেও শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। সোমা রায় নামে এক চাকরিপ্রার্থী কোর্টে আবেদন করার পর ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। সোমা রায়ের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম কোর্টে অভিযোগ জানান যে, ভুয়ো নিয়োগপত্র নিয়ে অনিমেষ তিওয়ারি ২০১৯ সাল থেকে থেকে শিক্ষকতা করছেন এবং বেতন নিচ্ছেন। সব তথ্য প্রমাণাদি বিচার দেখার পর মাননীয় বিচারপতি স্কুলের ছাত্রদের দুর্দশার কথা ভেবে তিনি যে চিন্তাগ্রস্ত সে কথা জানিয়েছেন।
এরপর বিচারপতি নির্দেশ দেন যে, যত শীঘ্র সম্ভব অনিমেষ তিওয়ারি নামের ওই ব্যক্তির চাকরি সংক্রান্ত সব নথি যেন জেলা স্কুলপরিদর্শক সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করেন এবং বাজেয়াপ্ত সকল নথি নিজের হেফাজতে রাখেন। তারপর সেই সকল নথিপত্র যাচাই করার তিনি কোর্টে রিপোর্ট জমা দেবেন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনকে কোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এছাড়াও তিনি বলেন আগামী ১০ ই জানুয়ারির মধ্যে যেন অনিমেষ তিওয়ারি এবং সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক, তথা অনিমেষের বাবাকে আদালতে হলফনামা জমা দিতে হবে। আগামী ১৫ ই জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
এই বিষয়ে অনিমেষ তিওয়ারি জানান যে, ”এসএসসি-র কাছেই তো আমার পরীক্ষার উত্তরপত্র জমা আছে। তার ভিত্তিতে ওরা নির্দিষ্ট মেমোয় আমাকে চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠির ভিত্তিতে আমি স্কুলে যোগ দিয়েছি। এটার মধ্যে কোনও জালিয়াতি আছে কি না, তা এসএসসি-ই বলতে পারবে। হাই কোর্টের কাছে খাতা জমা দিক তারা। তবে আমার কাছে যে-সব নথি রয়েছে, সবই অরিজিনাল। কোর্ট চাইলে অবশ্যই সেগুলি জমা দেব।”
এদিকে অনিমেষের চাকরির যে অনুমোদনপত্র, সেটিতেও একটি আলাদা একটি মেমো নম্বর আছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই মেমো নম্বরে তাঁর অফিস থেকে অন্য এক শিক্ষককে চাকরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এর মধ্যে আবার তৃতীয় ব্যক্তির চাকরির কথা উঠে আসছে। অতএব, এখনো পর্যন্ত পাওয়া সব তথ্য অনুযায়ী অনিমেষের চাকরি বৈধ কিনা সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দানা বাঁধছে।
কোর্ট আরো জানিয়েছে যে, অনিমেষ ওই স্কুলে কর্মশিক্ষার শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু তাঁর নিয়োগের সুপারিশপত্র ও নিয়োগপত্রে তাঁকে ভূগোলের শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা আছে। এবার তিনি একজন ভূগোলের শিক্ষক কিভাবে একজন কর্মশিক্ষার শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন, আদালতের তরফ থেকে এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।