ওয়েব ডেস্কঃ- বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের ‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে যে তোলপাড় শুরু হয়েছে, তাতে প্রশাসন কোনো মন্তব্য না করলেও এবার মুখ খুললেন শতাধিক প্রাক্তন আইএএস অফিসার। মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-এর উদ্দেশ্যে ধর্মান্তরণ আইন তুলে নেওয়ার জন্য চিঠি করেন 104 জন প্রাক্তন আইএএস অফিসার।
এদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন বিদেশ সচিব নিরুপমা রাও, প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উপদেষ্টা টিকেএ নায়ার। সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘যে সংবিধানে হাত রেখে শপথ গ্রহণ করেছিলেন, তার সম্পর্কে নিজেদের জ্ঞান ঝালিয়ে নেওয়া উচিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ সমস্ত রাজনীতিকদের’।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘যে গঙ্গা-যমুনার তীরে একসময় সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল, সেই উত্তরপ্রদেশ এখন ঘৃণার রাজনীতি, বিভাজন এবং ধর্মান্ধতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলির গায়ে সাম্প্রদায়িকতার প্রলেপ পড়েছে। যে কারণে এই স্বাধীন দেশে, স্বাধীন নাগরিক হিসেবে যারা বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন, সেই যুব সমাজের উপর নৃশংস অত্যাচার চালাচ্ছে আপনার প্রশাসন’।
দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু মেয়েদের মুসলমান পরিবারে বিয়ে আটকানোর জন্য নানান প্রকারের অভিযান চালাচ্ছিলেন যোগী সরকার। অবশেষে এবছরের নভেম্বর মাসের ‘লাভ জিহাদ’ আইন পাস করে বর্তমান সরকার। এরপর থেকেই বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্নভাবে হেনস্তার খবর কানে আসতে থাকে, কিন্তু এই ব্যাপারে মুখে পুরোপুরি কুলুপ আটে প্রশাসন এবং বিভিন্ন কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়। মোরাদাবাদ-এর ঘটনা তার চরম উদাহরণ।
মোরাদাবাদ-এ পিংকি নামক এক মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রশিদ নামের এক ব্যক্তি। রশিদ তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করানোর যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই বজরং দলের কর্মীরা রশিদ এবং তার ভাই সেলিমকে গণপ্রহারের পর থানায় নিয়ে যায় এবং পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
পিংকিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সরকারি হোমে এবং এইসব ঘটনার টানা-পোঁড়েনে গর্ভপাত হয় তার। অভিযোগ ওঠে যে, হিন্দু ঘরের মেয়ে পিংকিকে জোর করে বিয়ে করে রশিদ। কিন্তু আদালতে পিংকি জানায়, সে স্বইচ্ছায় রশিদকে বিয়ে করে। এরপর দু-সপ্তাহ পর জেল থেকে ছাড়া পায় রশিদ।
এই ঘটনা সহ আরো অনেক এই ধরনের অমানবিক ঘটনার উল্লেখ করেন চিঠিতে আইএএস অফিসাররা এবং যথেষ্ট কঠোরভাবে বলা হয়, ‘নিরীহ মানুষকে একদল লোক হেনস্তা করছে এবং সবকিছু দেখেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। এর স্বপক্ষে কোন যুক্তি খাটে না। একজন মহিলা তার সন্তান হারিয়েছেন। এই ধরনের নৃশংসতা কমার কোন লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ধর্মান্তরণ অর্ডিন্যান্স ঢাল করে ভারতীয় মুসলিম এবং স্বস্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন মহিলাদের ইচ্ছাকৃতভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে’।
এই চিঠির উত্তরে কোন জবাব এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-এর তরফ থেকে।